গান

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা - সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি | | NCTB BOOK

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বিদ্রোহী কবি হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে। তাঁর লেখা ‘চল্ চল্ চল্' গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত। তিনি নানা বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন এবং সেসব গানে নতুন নতুন সুর দিয়েছেন। এছাড়া তিনি গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ ও নাটক লিখেছেন। ‘অগ্নি-বীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘সাম্যবাদী’, ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘শিউলিমালা”, ‘যুগবাণী’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। নিচে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান দেওয়া হলো।

মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম

         কাজী নজরুল ইসলাম

মোরা      ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, মোরা ঝরনার মতো চঞ্চল।

মোরা     বিধাতার মতো নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মতো সচ্ছল ৷

মোরা     আকাশের মতো বাধাহীন,

মোরা     মরু-সঞ্চর বেদুইন,

মোরা     জানি না কো রাজা রাজ-আইন,

মোরা     পারি না শাসন-উদূখল!

মোরা     বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল।

মোরা     সিন্ধু-জোয়ার কল-কল

মোরা     পাগলা-ঝোরার ঝরা-জল

কল-কল-কল্ ছল-ছল-ছল্ কল-কল-কল্ ছল-ছল-ছল্ ৷

মোরা      দিল-খোলা খোলা প্রান্তর,

মোরা      শক্তি-অটল মহীধর,

মোরা      মুক্ত-পক্ষ নভ-চর,

মোরা      হাসি-গান সম উচ্ছল।

মোরা      বৃষ্টির জল বনফল খাই, শয্যা শ্যামল বন-তল,

মোরা      প্রাণ-দরিয়ার কল-কল,

মোরা      মুক্তধারার ঝরা-জল

চল-চঞ্চল কল-কল-কল্ ছল-ছল-ছল্ ছল-ছল-ছল্ ছল-ছল-ছল ।

 

শব্দের অর্থ

ঝঞ্ঝা: ঝড়।প্রান্তর: মাঠ
উদ্দাম: বাধাহীন।অটল: টলানো যায় না এমন ।
নির্ভয়: ভয়হীন।মহীধর: পাহাড়।
প্রকৃতি: চারপাশের জগৎ।মুক্ত-পক্ষ: ডানা-খোলা।
সচ্ছল: পরিপূর্ণ।নভ-চর: যা আকাশে চরে বেড়ায়।
মরু-সঞ্চর বেদুইন: মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানো যাযাবর।উচ্ছল: চঞ্চল।
রাজ-আইন: রাজার আইন।বনফল: বুনো ফল ।
উদূখল: মুষল, মুগুর।শয্যা: বিছানা।
শতদল: পদ্ম।শ্যামল: ঘন সবুজ
সিন্ধু-জোয়ার: সাগরের জোয়ার।বন-তল: বনভূমি।
পাগলা-ঝোরা: উদ্দাম ঝরনা।দরিয়া: সাগর।
ঝরা-জল: ঝরে পড়া জল।মুক্তধারা: বাধাহীন স্রোত।
দিল-খোলা: প্রাণখোলা । 

 

গান গাই

শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটি সবাই মিলে গাও।

গান বুঝি

উপরের গানে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে কিছু প্রশ্ন লিখে রাখো।

বুঝে লিখি

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গানটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো।

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

 

গানের বৈশিষ্ট্য খুঁজি

কবিতার সাথে গানের কী কী পার্থক্য আছে, দলে আলোচনা করে বের করো। গানের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো।

ক্রমপ্রশ্নহ্যাঁনা
লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে?  
পড়ার সময়ে কি তাল রক্ষা করতে হয়?  
লাইনগুলোতে শব্দসংখ্যা কি সমান?  
সুর করে গাওয়া হয় কি?  
এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা?  
এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা?  
এখানে কোনো কাহিনি পাওয়া যায়?  
এখানে কোনো চরিত্র আছে কি?  
এখানে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কি না?  
১০এটি একাধিক অনুচ্ছেদে ভাগ করা কি না?  
১১এর মধ্যে কোনো সংলাপ আছে কি না?  
১২এটি অভিনয় করা যায় কি না?  

 

গান কী

সুর করে গাওয়া কথাকে গান বলে। গানের মধ্যে বিশেষ কোনো আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ পায়।

গানের কথা যাঁরা লেখেন, তাঁদের বলা হয় গীতিকার। গীতিকাররা গানের কথাকে কবিতার মতো করে লেখেন। এই কথা অনুযায়ী গানের নানা রকম নাম হয়, যেমন: পল্লিগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ইত্যাদি।

গানের কথায় নানা রকম সুর থাকে। সুর হলো কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা। সুরের এককের নাম স্বর। এই স্বর মূলত সাতটি: সা রে গা মা পা ধা নি। যাঁরা গানে সুর দেন, তাঁদের বলে সুরকার।

গানে নানা রকম তাল থাকে। গানের সুর ও তাল ঠিক রাখার জন্য অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়, যেমন: হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, তানপুরা, গিটার ইত্যাদি। যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজান, তাঁদের বলা হয় বাদক বা যন্ত্রশিল্পী।

গানের কথা, সুর ও তাল মেনে যিনি গান পরিবেশন করেন, তাঁকে বলা হয় গায়ক বা শিল্পী।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion